প্রদীপ সেনগুপ্ত

তুই একবার যা করেছিলিস, তোর যা বদমাইশি করা স্বভাব ..দেয়ালে  ঠেসান দিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম হটাৎ তোর নিজের পা দিয়ে টেনে দিলি আর ধড়াম করে পড়ে গেলাম..কোমরে বেশ লাগলো. তখন রেগে গিয়ে হাতের কাছে একটা স্কেল (12″)  নিয়ে তাড়া করলাম  ..তুই তখন দোতলার টিচার ‘s room এর পাস দিয়ে উর্দ্ধশ্বাসে  ছুটছিস  ..আমিও তাড়া করলাম ..তারপর ছুঁড়লাম  স্কেল টা.  সেটা তো আর সোজা যাবে না, projectile হয়ে টিচার s room এর দিকে ডান দিকে বেঁকে গিয়ে দরজায় প্রচন্ড আওয়াজ করে আছড়ে  পড়লো ।

ভেতরে তখন হেডু খোসমেজাজে অন্য টিচারদের সঙ্গে খাজু করছিলেন  .. আর তখন নকশাল  আমল সবে শেষ হয়েছে কিন্তু ভয় যায়নি কারুর ।

ধড়াম করে আওয়াজের পর সব নিস্তব্ধ  .. স্যারেদের ভয়ে   প্রাণপাখি  উড়ে গেছে .. তিরিশ সেকেন্ড লেগেছিলো ব্যাপারটা বুঝতে ওনাদের  ..তারপর দেখি “কে রে , কে রে !”  করে হেডু বেরিয়ে এলেন  .. বাঁহাতে আমার দেন কাঁটা মুচড়ে  ধরে একটা ঠাটিয়ে  বিরাশি শিক্কার    থাপ্পড় বাঁ গালে .. গালের  চামড়া যেন খুলে পরে গেলো .. খুব লেগেছিলো 

এটার মূলে তুই ছাড়া আর কে ? 

শুভময় চ্যাটার্জি

8A ছিল বাঁদিকের প্রথম ঘর।কোন কাজে আমি বেরিয়েছিলাম।আমার সামনে তিনটে ছেলে প্রথমে গেট খোলার চেষ্টা করল।তখন বোধহয় ক্লাস শুরু হলে গেট বাইরের থেকে তালা দিয়ে রাখা হত।

পরিস্কার মনে আছে,সকালে ক্লাসে ব্যাগ রেখে আমি আর দ্বিজু যখন notice board er সামনে, তখন সিঁড়ির landing er জানলা দিয়ে acid bulb ছোঁড়া হয়েছিল, একটুর জন্য বেঁচে যাই। reflex e মাথা নিচু করে বসে পড়েছিলাম। দ্বিজুর মনে আছে কিনা জানিনা ।

গেট খুলতে না পেরে তারা গেট বেয়ে উঠে দোতলার বারান্দা দিয়ে ঢুকে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসতেই একেবারে মুখোমুখি।

সনাতন সেই যে পাইপ বেয়ে পালালো ।

সেটা খালি আমি ক্লাস থেকে দেখেছিলাম ।

আর ফিরলো না।

ঠিক সেই মুহূর্তে গন্ডগোল শুনে অফিস ঘর থেকে দ্বিজুর বাবা বেরোলেন।এক লহমায় পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুভব করে আমার হাতে হ্যাঁচকা টান দিয়ে অফিস ঘরে ফিরে দরজা বন্ধ করে দিলেন।

সৌমিত্র সিংহ

১৯৬৫ সালের ঘটনা l এটা আগে একবার বলেছি শুভময় শোনেনি তাই রিপিট করলাম l এর পেছনে লুকিয়ে যা আছে তা  হলো আমরা দুজন কেন গায়ক হতে পারিনি তার কারণ l 

একবার স্কুলে  বেশ সকাল সকাল পৌঁছে গেছি , ব্যাগ রেখে আমি ও শুভময় বেরিয়ে পড়লাম l হেডস্যারের ঘরের পাশে তেওয়ারিজির একটা খাটিয়া ছিল l সেখানে আমি ও শুভময় বসে মনের আনন্দে  তালি বাজিয়ে রামা হো , রামা হো বলে গান করতে শুরু করলাম l  

এক কানে হাত রেখে অন্য হাত প্রসারিত করে সবে আলাপ ছেড়ে গানের জোড়  বা ঝালা র দিকে সবে  ঢুকবো বলে ভাবছি  দুজনের কানে টান  পড়লো, অর্থাৎ তেওয়ারিজির উদয় হলো আর দুজনের কান ধরে হেডস্যারের ঘরে ,  আমাদের দ্রুপদী গানের গানের দফারফা হয়ে গেলো l 

পুরো প্রথম ক্লাসটা আমরা দুজনে নীল ডাউন l আমি শাস্তি পেতে অভ্যস্ত , শুভময় সেরকম ছিল না , দেখলাম ওর কান দুটো লাল হয়ে গেছে আর মনে মনে ফুঁসছে সেটা হেডস্যারের ওপর নাকি আমার ওপর তাই বা কে জানে l

শুভময় দারুন ভালো সেতার বাজাতো বলে শুনেছি এবং তার কারণে বাম  হাতের তর্জনীটা শক্ত হয়ে গেছিলো , কিন্তু ওর গান কখনো আমার শোনা হয়নি l কে  জানে শিশু বয়সে গানের ওপর এই নির্মম আঘাত হয়তো মন থেকে কোনোদিনই মেনে নিতে পারেনি ۔۔۔۔জানি না সে রাগ এখনো মনে ধরে রেখেছে কিনা কে জানে ? 

যেটা মনে আছে তা হলো হেডস্যারের বাড়ি থেকে হেডস্যারের ঘর অবধি দুজনের দুটো কান  তেওয়ারিজির হাতে ছিল – মনের মনিকোঠায় এখনো জ্বল জ্বল করে ভাসছে l

পুলক দও

চক চুরির গল্প। আমাদের ছোটবেলায় day class এ পৌঁছতাম একটু আগে আগে। তার একটা কারণ ছিল । Teachers room এ কেউ থাকতো না  তখন ।  আর ওখানে সাদা, নীল, হলুদ চক সব মজুদ থাকতো। আমরা সেগুলো চুরি করতাম। কোনো কারণ  নেই কিন্তু। বাড়ি আনতাম তারপর অযত্নে ফেলে দেয়া হতো। আসলে কার চকের সংগ্রহ কত ভালো সেটাই ছোটবেলায় বিবেচ্য ছিল ।

একবার কি হয়েছে সৌমিত্র চক নিয়ে পালিয়েছে, একটি ছেলের মনে হয়েছে চকগুলো তার পাওয়া উচিৎ ছিল, কিন্তু সে হাতাতে পারেনি। রাগে সে দূর থেকে সৌমিত্রকে চক ছুড়ে মেরেছে। কিন্তু কপাল খারাপ ছিল। লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে সেটা হেডমাস্টার মশাই এর দরজায় সপাটে গিয়ে লাগে। উনি তখন ঘর থেকে বেরোচ্ছিলেন । সামনেই অপরাধী হাজির ।  বেশ কয়েক ঘা খেয়ে গেলো, তারপর নীল ডাউন।

অনিন্দ্য সেন

একদিন চার বন্ধু মিলে গড়িয়াহাট গিয়েছি, অনেকক্ষণ গল্প আড্ডার  পর সভা ভাঙ্গার পালা । সেই একা বন্ধুর দূরবুদ্ধি চাপলো । সে আর এক বন্ধুকে বললো যাওয়ার আগেএকটা খেলা করা যাক। কি খেলা? আমাদের মধ্যে একজন গড়িয়াহাটের ঠিক মোড়ে দুটো হাত ফাঁক করে দাঁড়াবে আর মাঝখান দিয়ে অন্য একজন চোখ বুজিয়ে হাতটা ওঠাবে এবং নামাবে। যে হাত ফাঁক করে দাঁড়িয়েছিল সে আসতে আসতে হাতের দূরত্ব কমাবে, কিন্তু যে হাত নামাচ্ছে ও ওঠাচ্ছে সে চোখ বুজিয়ে কাজটা  করবে কিন্তু অন্যের ছোট হয়ে আসা হাতের সঙ্গে হাত লাগবে না। বাকি দুজন  বিচারক। এবার খেলা তো শুরু হলো, বাকি সবাই দূরে পালিয়ে গিয়ে মজা দেখতে লাগলো। সেই বন্ধুটা তখন গড়িয়াহাটের মোড়ে হাত ওঠাচ্ছে ও নামাচ্ছে , আর আশপাশের লোকেরা অবাক হয়ে দেখেছে…